দখিনের খবর ডেস্ক ॥ একের পর এক মালবাহী কার্গো আর বাল্কহেড ডুবির ঘটনায় হুমকির মুখে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুট। গত এক বছরে ওই রুটে অন্তত ১১টি নৌযান নিমজ্জিত হলেও বিআইডব্লিউটিএর কাছে সব তথ্য নেই। তবে অল্প দিনের মধ্যে ৩টি নৌযান ডুবির পর ঢাকা-বরিশাল নৌপথের মিয়ারচর রুটটি বন্ধ হয়ে গেছেভ আর অপেক্ষাকৃত বিপজ্জনক কালীগঞ্জ রুট দিয়ে নৌযান চলাচল করলেও নিমজ্জিত কার্গো-বাল্কহেডের কারণে ওই রুটটি সচল থাকা নিয়েও সংশয় রয়েছে। নিমজ্জিত নৌযানগুলো উদ্ধারেও কোনো অগ্রগতি নেই। সরকারি যেসব উদ্ধারকারী নৌযান রয়েছে সেগুলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ার কারণে ডুবন্ত নৌযান উদ্ধারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কতদিন ঢাকা-বরিশাল নৌরুটটি চালু থাকবে তা নিয়ে সংশয়ে পণ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, যাত্রী এবং নৌযান মালিকরা। কারণ বরিশাল নদীবন্দর থেকে শুরু করে মেঘনার মোহনা পর্যন্ত অহরহ নৌযান ডুবির ঘটনা ঘটছে অহরহ। কয়েকটি ঘটনা জানাজানি হলেও অধিকাংশই অগোচরে রয়ে গেছে। গত এক বছরে এ ধরনের ১১টি নৌযান ডুবির ঘটনা ঘটেছে।
সূত্র জানায়, গত বছর ২৫ মে মেঘনা নদীর মিয়ারচর এলাকায় নিমজ্জিত হয় মালবাহী কার্র্গো এমভি সিয়াম। ওই বছর ৬ আগস্ট মিয়ারচরের গজারিয়া গোবিন্দপুরে মুখোমুখি সংঘর্ষে নিমজ্জিত হয় এমভি টপশিপ এবং এমভি আল্লাহর দান নামের দুটি কার্গো। পরপর ওই ৩টি নৌযান ডুবে যাওয়ায় ঢাকা-দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো বিপাকে পড়েছে। নিরাপদ এবং স্বল্প দূরত্বের কারণে মিয়ারচর রুটটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিল। কিন্তু ৩টি কার্গোডুবির পর নাব্য সঙ্কট দেখা দেয়ায় বাধ্য হয়ে লঞ্চগুলো রুট পরিবর্তন করে মেহেন্দীগঞ্জের কালীগঞ্জ হয়ে ঢাকা চলাচল শুরু করে। তবে তাতে বেশ কিছু জটিলতাও দেখা দিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, গত বছর ১৪ ডিসেম্বর রাতে বরিশাল নদীবন্দরের সামান্য দূরে একেবারে মেইন চ্যানেলে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি শাহরুখ-২’র সঙ্গে সংঘর্ষে কীর্তনখোলা নদীতে ডুবে যায় মালবোঝাই কার্গো এমভি হাজী দুদু মিয়া। প্রায় ১২শ’ টন মাল বোঝাই ওই কার্গোটি এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া কালীগঞ্জ রুটের উলানিয়ায় ৪টি, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি এবং কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়িয়া এবং চরমোনাইতে দুটি কার্গো এক বছরেরও বেশি সময় ধরেডুবে আছে। সরকারি হিসাবে যে পরিমাণ কার্গো-বাল্কহেড ডুবির খবর জানা যায় বাস্তবে ওই সংখ্যা আরো বেশি। কারণ রাতে মালবাহী নৌযান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যেসব মালিক কার্গো-বাল্কহেড চালায়, তারাও শাস্তির ভয়ে দুর্ঘটনার খবর গোপন রাখছে। যেগুলো উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌযান চালনার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডুবে থাকা নৌযানের কারণে বেশ খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো চলাচল করছে। মিয়ারচর রুটটি ছিল লঞ্চ চলাচলের সহজ ও নিরাপদ। বর্তমানে যে কালীগঞ্জ রুট ধরে লঞ্চ চলাচল করছে তা মেঘনার ডেঞ্জার জোন এলাকার অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে নৌযান ডুবে থাকায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ চালছে। নিমজ্জিত নৌযানগুলোর কারণে পলি জমে নাব্যতার আরো ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আর তেমন কিছু হলে ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌযান চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্টদের মতে, হিজলার মিয়ারচর এবং গজারিয়ায় ডুবে যাওয়া ৩টি কার্গো বেসরকারিভাবে উত্তোলনের চেষ্টা চলছে। তার মধ্যে ডুবে যাওয়া ক্লিংকার বোঝাই একটি কার্গো উদ্ধার করা নিয়েই জটিলতা দেখা দয়েছে। একদিকে পলি পড়ে আটকে যাওয়া এবং অন্যদিকে জাহাজটি মাঝ বরাবর ভেঙে যাওয়ায় উদ্ধার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া মিয়ারচরে ডুবে যাওয়া এমভি সিয়াম উদ্ধারে ৬০ লাখ টাকার উন্মুক্ত টেন্ডার হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি উদ্ধার করা যায়নি। তাছাড়া শেওড়া ও মৌলভীরহাটে বহু আগে ডুবে যাওয়া দুটি নৌযান উদ্ধার করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে নদীবন্দরসংলগ্ন কীর্তনখোলায় নিমজ্জিত কার্গো দুদু মিয়া উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে নিমজ্জিত নৌযান উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নেই। ফলে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর চারটি উদ্ধারকারী জাহাজের রস্তম এবং হামজা বর্তমানে বয়সের ভারে ন্যুব্জ। আর ১৯৬৫ সালে উদ্ধার বহরে যোগ হওয়া হামজা আরিচা ঘাটে রয়েছে। এর উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র ৬০ টন। ১৯৮৪ সালে মাওয়া ঘাটে থাকা রুস্তম বহরে যোগ দেয়। আর ২০১৩ সালে আমদানি করা দুই উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক এবং প্রত্যয়ের উত্তোলন ক্ষমতা ২৫০ টন করে। নির্ভিক বর্তমানে বরিশালে আর প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জে রয়েছে। এই ৪টি উদ্ধারকারী জাহাজ মিলিয়ে যেখানে উত্তোলন ক্ষমতা ৬২০ টন, সেখানে বরিশাল-ঢাকা নৌ চ্যানেলে নিমজ্জিত অবস্থায় থাকা প্রায় প্রতিটি কার্গোর ওজন ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টন। তার ওপর আবার রস্তম এবং হামজা একযোগে উদ্ধারকাজ চালাতে পারলেও প্রত্যয় ও নির্ভিক তা পারে না। সেগুলোকে আলাদা-আলাদাভাবে কাজে লাগাতে হয়।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক এসএম আজগর আলী জানান, ডুবন্ত নৌযান নিয়ে শঙ্কার কারণ নেই।
Leave a Reply